বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০১:২৭ পূর্বাহ্ন
মাহফুয আহমদ:
আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবানদের ওপর হজ অবশ্য পালনীয় একটি বিধান। হজ ইসলামি শরিয়তের অন্যতম একটি স্তম্ভ ও রুকন। সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘পাঁচটি স্তম্ভের ওপর ইসলামের ভিত্তি : শাহাদত বা আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসুল- এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া, নামাজ কায়েম করা, জাকাত আদায় করা, রমজানের রোজা রাখা এবং সামর্থ্য থাকলে বায়তুল্লাহর হজ করা।’ (সহিহ বোখারি, হাদিস : ৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৯)
প্রিয় নবী (সা.) একাধিক হাদিসে আমাদের হজের গুরুত্ব, সওয়াব ও উপকারিতা বুঝিয়েছেন। সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘জান্নাতই হচ্ছে মকবুল হজের একমাত্র প্রতিদান।’ (সহিহ বোখারি, হাদিস : ১৭৭৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৩৭)
তবে যাদের হজে অথবা ওমরাহতে যাওয়ার সামর্থ্য ও সক্ষমতা নেই, তাদের জন্যও মহান আল্লাহ এমন কিছু পথ বের করে দিয়েছেন; যেগুলো দ্বারা দুর্বল ও অসামর্থ্যবান বান্দারা কবুল হজের অথবা ওমরাহর সওয়াব পেতে পারেন। প্রিয় নবী (সা.) বিভিন্ন হাদিসে আমাদের সেসব পথ বা আমল বাতলে দিয়েছেন। সেসব হাদিসের কোনোটা সহিহ বোখারি, সহিহ মুসলিম, সুনানে তিরমিজি কিংবা অন্য কোনো হাদিসগ্রন্থে অকাট্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আবার কোনোটা ওই মানের না হলেও দুর্বল নয়, পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে যেগুলোকে হাসান বলা হয়। অতএব আমরা যদি বিশ্বাস এবং সওয়াবের দৃঢ় আশ্বাস নিয়ে এসব আমল করতে পারি, তবে অনেক বিরাট প্রতিদানের অধিকারী হতে পারব।
সাহাবি আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে ফরজ নামাজ আদায় করল, সে যেন হজ করে এলো। আর যে ব্যক্তি নফল নামাজ আদায় করতে মসজিদে গমন করল, সে যেন ওমরাহ করে এলো।’ (তাবারানি, হাদিস : ৭৫৭৮) হাদিসটি হাসান।
এটা অনেক বড় সওয়াবের একটা কাজ। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে গেল কোনো ভালো কথা শেখা বা শেখানোর উদ্দেশ্যে, সে পরিপূর্ণরূপে হজ আদায়কারী একজন ব্যক্তির মতো সওয়াব লাভ করবে।’ (তাবারানি, হাদিস : ৭৪৭৩; মাজমাউজ জাওয়াইদ : ১/১২৩, হাদিস: ৪৯৯)
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করল, তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে বসে আল্লাহর জিকির করল, এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করল, সে ব্যক্তি হজ ও ওমরাহর সওয়াব নিয়ে ফিরল।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৫৮৬)
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, জনৈক ব্যক্তি নবীজি (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমি জিহাদে অংশ নিতে চাই; কিন্তু আমার সেই সামর্থ্য ও সক্ষমতা নেই। মহানবী (সা.) প্রশ্ন করলেন, ‘তোমার মাতা-পিতার কেউ কি জীবিত আছেন? লোকটি বলল, আমার মা জীবিত। প্রত্যুত্তরে নবীজি বললেন, তাহলে মায়ের সেবা করে আল্লাহর কাছে জিহাদে যেতে না পারার অপারগতা বা ওজর পেশ করো। এভাবে যদি করতে পার এবং তোমার মা সন্তুষ্ট থাকেন, তবে তুমি হজ ওমরাহ ও জিহাদ-সংগ্রামের সওয়াব পেয়ে যাবে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং মায়ের সেবা করো।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ: ১৩৩৯৯)
সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানে ওমরাহ আদায় করলে, আমার সঙ্গে হজ আদায়ের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে।’ (সহিহ বোখারি, হাদিস : ১৭৮২; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২২)
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, দরিদ্র লোকেরা রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, সম্পদশালী ব্যক্তিরা বেশি সওয়াব এবং জান্নাত নিয়ে যাচ্ছে! আমরা যেমন নামাজ পড়ি; তারাও পড়ে! আমরা যেমন রোজা রাখি; তারাও রাখে! উপরন্তু তাদের রয়েছে অতিরিক্ত সম্পদ; ফলে তারা হজ করতে পারে, ওমরাহ করতে পারে, জিহাদ-সংগ্রামে অংশ নিতে পারে, দান-সদকাও করতে পারে। নবীজি তাদের বললেন, আমি তোমাদের এমন একটি আমল শিখিয়ে দেব যা করতে পারলে তোমরা অগ্রগামীদের স্তরে পৌঁছে যাবে এবং যারা তোমাদের পেছনে তারা তোমাদের স্তরে পৌঁছতে পারবে না, তোমরা হবে শ্রেষ্ঠতম মানব, তবে অন্য কেউ এটি করলে সেও তোমাদের মতো হয়ে যাবে। আমলটি হলো, প্রত্যেক নামাজের পর তেত্রিশবার করে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুল্লিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার পাঠ করবে।’ (সহিহ বোখারি, হাদিস : ৮০৭; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬৭৪)
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি নিজ ঘরে পবিত্রতা অর্জন করল, তারপর মসজিদে কুবায় এসে কোনো নামাজ আদায় করল, সে ওমরাহর সওয়াব হাসিল করল।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪১২)